মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় – মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন

মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় – মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়া জরুরী কারণ বাংলাদেশে আয়ের উৎস কম। বাংলাদেশে অনেক দরিদ্র পরিবার আছে। তাদের আর্থিক অবস্থা করুণ হওয়াতে ঠিকমতো পরিবার চালানো অনেক কষ্টদায়ক। এক্ষেত্রে একটি মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়া একটি পরিবারের ভরণপোষণে অনেক সহায়ক।
একটি সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন এবং সন্তানকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশ সরকার অতি দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যে সকল নারী মাতৃত্বকালীন অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় তারা চাইলে ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে।
আপনি যদি মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে চান। এ জন্য আপনাকে কি পদক্ষেপ নিতে হবে অর্থাৎ অনলাইন আবেদন করার নিয়মাবলী এবং কিভাবে আবেদন করবেন। তা এই পোস্ট থেকে জানতে পারবেন। মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম দেখে নিন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০০৭ ও ২০০৮ এর অর্ধবছর থেকে দরিদ্র মহিলাদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা কর্মসূচি শুরু করেছে। অনেকেই জানেনা মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা করে দেওয়া হয়। মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করার নিয়ম নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
কিভাবে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করবেন
আপনি দুটি উপায়ে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন প্রথমটা হচ্ছে সরাসরি অফিসে গিয়ে এবং দ্বিতীয়টি হল, মোবাইল বা কম্পিউটার এর মাধ্যমে অনলাইন আবেদন। সরাসরি আবেদন করার ক্ষেত্রে অনলাইন থেকে ফরম সংগ্রহ করতে হবে অথবা কাছের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অফিস থেকে গর্ভকালীন সেবার কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
📌আরো পড়ুন 👇
তারপর সকল তথ্য পূরণপূর্বক প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হবে। ফরমে দেওয়া মোবাইল নম্বরে যে কোনো মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যেমনঃ বিকাশ, রকেট বা নগদ একাউন্ট থাকতে হবে। তারপর সকল ডকুমেন্ট সমাজসেবা কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জমা দিতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন
মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন অবেদন করার নিয়ম জেনে নেওয়ার আগে একটা বিষয়ে ক্লিয়ার হয়ে নিন সেটা হচ্ছে অনলাইনে মাতৃত্বকালীন আবেদন করার ক্ষেত্রে প্রতিমাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি নিম্নে ধাপে ধাপে দেখানো হলো –
ধাপ ১: আবেদনকারী ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ
প্রথমে মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদনকারীকে ব্যক্তিগত তথ্যপূরণ করতে হবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে। আবেদন করতে এই লিংকটি ভিজিট করুন। নিচের ছবির মত আবেদনের ফরম আপনার সামনে ওপেন হবে।
- প্রথমে আবেদনকারীকে অর্থবছর নির্বাচন করতে হবে এরপরে কোন অর্থবছরে আবেদন করবে সেটা নির্বাচন করতে হবে।
- এরপর আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার দিন।
- জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা জন্ম তারিখ নির্বাচন করুন।
- আবেদনকারীর নাম বাংলায় লিখুন।
- আবেদনকারীর নাম ইংরেজিতে লিখবেন।
- আবেদনকারীর পিতা, মাতা এবং স্বামীর নাম লিখবেন।
- ব্যাচ নাম্বার অপশনে চলমান অর্থবছর সিলেক্ট করে দিতে হবে।
ব্যক্তিগত তথ্যের দ্বিতীয় ধাপ –
- ডান পাশে আবশ্যক নামক একটি বক্স দেখতে পাবেন। সেখানে আপনার গ্রামে আপনাকে যে নামে গ্রামে মানুষ চিনে থাকে সেই নামটি লিখুন।
- এরপর আবেদনকারীর জন্মস্থান, ধর্ম, মোবাইল নাম্বার, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রক্তের গ্রুপ, বৈবাহিক তথ্য সমূহ সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।
- এরপরে আপনি যদি একজন প্রবাসী বাংলাদেশী হয়ে থাকেন, তাহলে এনআরবি এখানে টিক মার্ক দিন।
- তারপরে আপনি অন্য কোন সরকারি ভাতা পেয়ে থাকলে এই অপশনের উপরে টিক মার্ক করে দিতে হবে।
- ধাপ ২: আবেদনকারীর বর্তমান স্থায়ী ঠিকানা
এ ধাপে আবেদনকারীর বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা দিতে হবে।
বর্তমান ঠিকানা যেমন -বাড়ি/ গ্রাম, রাস্তা /ব্লক /সেক্টর বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড নাম্বার, পোস্টাল কোড।ভোটার আইডি কার্ডে থাকাই সকল ইনফরমেশন দেখে তথ্যগুলি পূরণ করুন।
ডান পাশে স্থায়ী ঠিকানা নামক একটি অপশন রয়েছে সেখানে আপনার ঠিকানা একই হলে বর্তমান ঠিকানার মত খালি ঘরে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: আবেদনকারীর অর্থ ও সামাজিক তথ্য
- আপনি যদি পরিবারের প্রথম রোজগার কারী মহিলা হয়ে থাকেন তাহলে হ্যাঁ বাছাই করুন অন্যথায় না বাছাই করুন।
- আপনার মাসিক আয় প্রদান করতে হবে ।
- আবেদনকারী প্রতিবন্ধী হলে থাকলে হ্যাঁ অথবা না নির্বাচন করতে হবে।
- বাসস্থান আছে কিনা হ্যাঁ অথবা না নির্বাচন করতে হবে।
- কৃষি জমি /পুকুর আছে কিনা হ্যাঁ অথবা না নির্বাচন করতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স উল্লেখ করতে হবে।
- গর্ভধারণ ক্রম -এখানে আবেদনকারী প্রথম গর্ভধারণ না দ্বিতীয় গর্ভধারণ তার নির্বাচন করতে হবে।
উপরের এই ইনফরমেশনগুলি সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।
ধাপ ৪: আবেদনকারীর পেমেন্ট তথ্য
👉পেমেন্টের ধরন- ভাতার টাকা ব্যাংকে নিবেন না মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবেন তা নির্বাচন করুন। মোবাইল ব্যাংকিং নির্বাচন করলে এখান থেকে বিকাশ, রকেট, শিওর ক্যাশ, ওকে ওয়ালেট, এম ক্যাশ, উপায়, নগদ যেকোনো একটি বাছাই করুন।
👉হিসাবে নাম- এখানে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম লিখুন।
👉হিসাবের নম্বর- এখানে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট নাম্বার প্রদান করুন।
ধাপ ৫: আবেদনকারীর ছবি ও স্বাক্ষর সংযোজন
মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদনের শেষ ধাপে এসে আপনাকে নিজের ছবি ও স্বাক্ষরের ছবি সংযুক্ত করে দিতে হবে। তার জন্য আপনাকে নিজের একটি স্পষ্ট ছবি ও একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে আপনার মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ডিভাইসে সেইভ করে রাখতে হবে। তারপরে সেটা Browse অপশনে ক্লিক করে আপনার সেই ছবিটি আপলোড করে দিতে হবে।
এই ফাইলটি আপলোড হওয়ার পরে আপনাকে ‘সংরক্ষণ করুন ‘ নামক এই অপশনে ক্লিক করতে হবে। এই আবেদনটি যদি সঠিক থাকে মানে আপনি যদি সমস্ত তথ্যগুলি ঠিকভাবে দিয়ে থাকেন তাহলে পরবর্তীতে এই তথ্যগুলি তারা যাচাই বাছাই করে আপনার মোবাইলে জানিয়ে দেওয়া হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা ইউনিয়ন পরিষদে আবেদনের নিয়ম
সরকারিভাবে মাতৃত্বকালীন ভাতা ইউনিয়ন পরিষদের জন্য আবেদন নির্ধারিত আবেদন ফি হচ্ছে ৪০ টাকা মাত্র। ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল পোর্টালে গিয়ে আপনাকে বেশ কিছু জরুরি কিছু তথ্য দেওয়া লাগবে যেমন
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- গর্ভবতী টিকার কাড
- গর্ভবতী প্রমাণস্বরূপ
- মোবাইল ব্যাংকি(বিকাশ, নগত, রকেট) বা ব্যাংক একাউন্ট।
এই তথ্য গুলো নিয়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আপনাকে আবেদন করে দিবেন আপনার আর কিছু করতে হবে না। আশা করি কিভাবে আবেদন করবেন সেই সম্পর্কে একটা আইডিয়া পেয়েছেন।
মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার অনুমোদন পেলে আপনি প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে মাতৃত্বকালীন ভাতা পাবেন। মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা প্রতি মাসে মাসে প্রদান করা হয় না। তবে যাদের দুইটি সন্তান রয়েছে তারা তারা আরো বেশি টাকা মাতৃত্বকালীন ভাতা পেয়ে থাকেন। তারা প্রতি মাসে ৮০০ টাকা হারে ৩৬ মাসে মোট ২৮ হাজার ৮০০ টাকা মাতৃত্বকালীন ভাতা পেয়ে থাকেন।
মাতৃত্বকালীন ভাতা চেক
মাতৃত্বকালীন ভাতা “বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন” এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চেক করা যাবে। ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার বিভাগ, জেলা, উপজেল ও ইউনয়ন সিলেক্ট করে নোটিশ অপশনে গিয়ে চেক করতে হবে। এই বছর যাদের মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড হয়েছে তাদের নাম সেখানে দেওয়া থাকবে। এছাড়া মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমেও আপনাকে জানিয়ে দিবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা চেক করার নিয়মঃ
- প্রথমে https://bangladesh.gov.bd/index.php এই ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করুন।
- উপরের মেন্যুবার থেকে ৮ বিভাগ সিলেক্ট করুন।
- এখন বিভাগসমূহ থেকে আপনি যে বিভাগ থেকে আবেদন করেছিলেন, ঐ বিভাগে ক্লিক করুন।
- এরপরে আপনাকে আবারও বিভাগ অপশনে ক্লিক করে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন সিলেক্ট করতে হবে।
- মেন্যুবার থেকে বিভিন্ন তালিকা অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- তারপরে মাতৃত্বকালীন ভাতা অপশন দেখতে পাবেন, সেখানে ক্লিক করলে তালিকা দেখতে পাবেন।
এই ধাপ গুলো ফলো করে মাতৃত্বকালীন ভাতা চেক করা যাবে। সেখান থেকে আপনার নাম খুঁজে নিবেন। লিস্টে নাম থাকলে আপনার মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড টি হয়ে গেছে। আর লিস্টে নাম খুঁজে না পাওয়া গেলে ভাতা কার্ড টি আপনার হয়নি।
মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়
মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য অথবা আবেদন করতে নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। নিন্মে সে সম্পর্কে দেয়া হলোঃ
👉ভাতা পাওয়ার জন্য মা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের নিকট আবেদন করা লাগবে। ইউনিয়ন বা উপজেলা পরিষদে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করা হয়।
👉ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন যোগ্যতা আবশ্যক। এই ভাতা পেতে ভাতাভােগীর বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যেথাকা লাগে।
👉আবেদনকারীর মাসিক আয় ২০০০ টাকার নিচে হতে হবে।
👉প্রাথমিক আবেদনে নির্বাচন হলে ইউনিয়ন পরিশোধ থেকে ২ বছরের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড দেওয়া হবে। তার পাশাপাশি আপনি সেই কার্ডের মাধ্যমে আপনার ভাতা পেতে থাকবেন।
অনেকেই গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য মা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে থাকেন। মা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সেই আবেদন ফরমটি ভালো ভাবে পূরণ করে জমা দেয়ার পর তারা যাচাই বাছাই করে ভাতার জন্য অনুমোদন দিবে।
এছাড়াও আপনি চাইলে অনলাইনে মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। এর জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন ফরম পূরণ করে তা সাবমিট করতে হবে। তবে আরও বেশকিছু নিয়ম বা শর্ত রয়েছে যা মেনে আপনাকে আবেদন করতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা কিসের মাধ্যমে পাবো
গর্ভকালীন বা মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করার সময় আবেদন ফরমে পেমেন্টের তথ্য দেওয়ার জন্য ফাঁকা ঘর থাকবে। সেখানে আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং এর তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। যে ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং এর তথ্য আপনি আবেদন ফ্রম এ দেবেন সেই একাউন্টে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা
মাতৃত্বকালীন ভাতার অনলাইনে আবেদন করার নিয়মাবলী ও শর্তাবলী জানা প্রয়োজন। ভাতা পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা লাগবে পর্যায়ক্রমে জানতে পারবেন। নিম্নে উল্লেখিত যোগ্যতা থাকলে, অবশ্যই মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করবেন। বেশ কয়েকটি নীতিমালা মেনে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই মা ও শিশু ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
📌আরো পড়ুন 👇
নীতিমালা গুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে নির্ধারিত বয়স। নুন্যতম বয়স না হলে এবং ভাতার জন্য উপযুক্ত না হলে মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড দেওয়া হবে না। দরিদ্র গর্ভবতী মা ও শিশুর সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য নতুন নীতিমালা যুক্ত করেছে। এই শর্ত গুলো পূরণের মাধ্যমে একজন একজন গর্ভবতী নারী মাতৃত্বকালীন ভাতা পাবে। তাদের নীতিমালা ও প্রযোজ্য শর্ত গুলো নিম্নরূপঃ
- মাসিক আয় সর্বোচ্চ ১৫,০০০ টাকার নিচে হতে হবে ৮ থেকে ১০ এর মধ্যে হলে বেশি ভালো।
- প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভধারনকালে যেকোনো একবার আবেদন করতে পারবে।
- অনলাইন ব্যাংকিং এর একাউন্ট থাকতে হবে।
- প্রথম অথবা দ্বিতীয় গর্ভকালীন সময়ে যেকোনো একবার।
- আপনার বয়স কমপক্ষে ২০ উপরে হতে হবে।
- প্রতিবন্ধী অথবা দরিদ্র মায়েরা বেশি অগ্রাধিকার পাবে।
- আবেদনকারী কে অবশ্যই গর্ভবতী হতে হবে।
- বসবাসের জন্য নুন্যতম বসত ভিটা না থাকলে বা অন্যের জায়গায় বাস করলে আবেদন করতে পারবে।
- ভাতাগ্রহীতাকে অবশ্যই জুলাই মাসে গর্ভবতী থাকতে হবে।
গর্ভবতী ভাতা করতে কি কি লাগে
- আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
- অন্তঃসত্ত্বা প্রমাণের জন্য একজন নিবন্ধিত ডাক্তারের কাছ থেকে গর্ভবতী সনদপত্রের ফটোকপি
- স্বামীর ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি (যদি থাকে)
- ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা হতে চারিত্রিক/নাগরিক সনদপত্র
- মোবাইল ব্যাংকিং তথ্য প্রদান করতে হবে যার মাধ্যমে টাকা আসবে।
- গর্ভকালীন সময় চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত হতে হবে।
- (ANC) কার্ড থাকতে হবে (মাতৃত্বকালীন টিকা কার্ড)।
- ১ম ও ২য় বাচ্চার জন্য এই ভাতা কার্যকর হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতার বয়সসীমা
গর্ভবতী বা মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদনের জন্য নুন্যতম বয়স সীমা দেওয়া আছে। এই বয়সের কম হলে বা এই বয়সের বেশি হলে ঐ নারী ভাতার জন্য আবেদনের সুযোগ পাবে না। এছাড়া তার প্রথম অথবা দ্বিতীয় গর্ভাবস্থার যেকোনো একবার আবেদন করতে পারবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তিক নীতিমালা অনুযায়ী মাতৃত্বকালীন ভাতা গ্রহন করার জন্য বয়সসীমা সর্বনিম্ন ২০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ বছর পর্যন্ত। এই বয়স সীমার মধ্যে হলে এবং আবেদনের যোগ্যতা পূরণ করতে পারলেই যেকোনো নারী মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড নেওয়ার জন্য উপযুক্ত থাকবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচী
বাংলাদেশ সরকার মাতৃত্বকালীন বা গর্ভকালীন ভাতা প্রদানের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সাল থেকে কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করে আসছে। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এই মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি টি প্রদান করা হয়। অর্থাৎ সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলতে গেলে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা প্রদানের মধ্য দিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়।
যা ছয় মাস অন্তর একজন গর্ব গতি মহিলা ৪৮০০ টাকা পেয়ে থাকেন। আর সন্তান ধারণের উপর ভিত্তি করে ভাতা প্রদান দুই বছর এবং তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা কবে চালু হয়
গর্ভস্থায় মা ও শিশুকে উন্নত চিকিৎসা ও আর্থিক ভাবে সচল হওয়ার জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করে। অপুষ্টিজনিত কারণে মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমাতে এই ভাতা বিশেষ ভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমানে গ্রাম ও শহরে এই ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর গ্রামীণ এলাকায় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এবং শহর এলাকায় ২০১০-১১ অর্থবছরে মাতৃত্বকালীন ভাতা চালু করেছে।
লেখকের শেষ মতামত
কোন দরিদ্র ব্যক্তির পরিবারের যদি কেউ গর্ভধারণ করে তাহলে এই সেবা নিতে পারবে ৪২৬ টি উপজেলায় থেকে। বর্তমানে ৪২৬ টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান রয়েছে। তবে ভাতা আবেদন করার জন্য কিছু শর্ত মানতে হবে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর অসংখ্য নবজাতক বা শিশু মৃত্যুবরণ করে থাকে।
এক গণনায় দেখা যায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল র্পযন্ত ১ থেকে ১১ মাস বয়সী এক হাজার শিশুর মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখা যায় গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে সঠিক যত্ন না নেওয়া।বাংলাদেশ সরকার সকল গর্ভবতী নারীদের প্রতি মাসে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করে থাকে। যাতে করে তারা নিজেদের সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা দারিদ্র মা ও সন্তানের জন্য। এই ভাতা নিয়ে অনেকেই প্রতারনার স্বীকার হয়। আমাদের সকলেরই উচিত তাদের অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া। প্রতারক চক্রের থেকে বাচতে অবশ্যই মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় তার সঠিক তথ্য জেনে নিবেন।
আপনারা যারা মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা প্রদান করা হয় তা জানতেন না আশা করছি তা জানতে পেরেছেন। শিশু অপমৃত্যু রোধ করতে গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন শিশুর বা নবজাতকের সঠিক যত্ন নিতে হবে।