গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা – গ্রামীণ ব্যাংক কি সরকারি

গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা – গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করতে চান তাহলে অবশ্যই গ্রামীণ ব্যাংকের আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা গুলো জেনে রাখা উচিত। এছাড়া অনেকে গ্রামীণ ব্যাংকের পেনশন হিসাব জানতে চান। তাদের প্রশ্নের কথা মাথায় রেখেই আমরা আর্টিকেলটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের পেনশন হিসাব আলোচনা করব। আর এর পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা গুলো জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।
গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা মূলত গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করে থাকে। ১৯৭৬ সালে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়। আমরা এখন গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা গুলো জানাবো।
গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা
গ্রামীণ ব্যাংকের অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে যা এখন আমরা এই পয়েন্টটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করব। গ্রামীণ ব্যাংকের সকল সুবিধা গ্রামীন এলাকার মানুষদের জন্য আর্থিক জীবনকে অনেক সহজ ও সুবিধা জনক করে তোলার জন্য প্রদান করা হয়।
গ্রামীণ ব্যাংকে বেশ কয়েকটি সুযোগ সুবিধা রয়েছে ব্যাংক ওভারড্রাফট সুবিধা, ঋণ সুবিধা, কিস্তি সুবিধা, মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ইত্যাদি। গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা গুলো নিম্নে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ
১। মৌলিক ঋণ সুবিধা
গ্রামীণ ব্যাংকের মৌলিক ঋণ সুবিধা হল একটি প্রাথমিক পর্যায়ে ঋণ সুবিধা। এই সুবিধাটি প্রদান করা হয় গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন সদস্যদের। তবে এই ঋণের পরিমাণ সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে সেই ব্যক্তিটির ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা কতটুকু সেটির উপর নির্ভর করে।
২। বীমা সেবা
ব্যাংকটি বিভিন্ন ধরণের বীমা সেবা প্রদান করে থাকে যেমন স্বাস্থ্য বীমা, ফসল বীমা, জীবন বীমা ও পশু বীমা সেবা প্রদান করে, যা প্রতিটা গ্রামীণ জনগণের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
৩। মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা
মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা হল গ্রামীণ ব্যাংকের অন্যতম আরো একটি ব্যাংকিং সুবিধা। এই সুবিধার মাধ্যমে ব্যাংকের গ্রাহকেরা মোবাইল ফোনে তাদের সকল ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারে। এটি গ্রাহকদের অনেক সহজ একটি ব্যাংকিং অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করে।
৪। সঞ্চয় ও পেনশন স্কিম
গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন সঞ্চয় ও পেনশন স্কিম সপরিচালনা করে, যার মধ্যে রয়েছে ৭ বছরে দ্বিগুণ মেয়াদী আমানত এবং গ্রামীণ পেনশন স্কিম (জিপিএস) ১২% সুদে।
৫। সার্ভিস একাউন্ট সুবিধা
গ্রামীণ ব্যাংক তাদের সকল গ্রাহকদের সার্ভিস একাউন্ট সুবিধা প্রদান করে থাকে। এই একাউন্ট এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহকগণ তাদের আয়োজিত অর্থ সঞ্চয় করতে পারেন। আবার এই সঞ্চিত অর্থ তারা নির্দিষ্ট লাভ অনুসারে ব্যাংকের কাছে থেকে উত্তোলন করে নিতে পারেন।
৬। কিস্তি সুবিধা
সকল গ্রাহকদের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক ঋণের কিস্তি সুবিধা দিয়ে থাকে। এই সুবিধার মাধ্যমে মূলত যারা লোন নেয় তারা কিস্তির টাকা ভেঙে ভেঙে দিনে দিনে পরিশোধ করার সুযোগটা পায়। এতে করে তাদের ঋণ প্রদান করা অনেক সহজ হয় এবং ঋণ আস্তে আস্তে কমে যায় ।
৭। সহজলভ্য ক্ষুদ্রঋণ
গ্রামীণ ব্যাংক জামানত ছাড়াই কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা ও গৃহনির্মাণের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে। বিশেষ করে নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে এই ঋণ বিতরণ করা হয়।
৮। ব্যাংক ওভারড্রাফট সুবিধা
সকল গ্রাহকদের গ্রামীণ ব্যাংক ওভারড্রাফট সুবিধা প্রদান করে থাকে। এই সুবিধার মাধ্যমে গ্রাহকরা জমার অতিরিক্ত টাকা খুব সহজেই তুলে নিতে পারে। সকল ব্যাংক এই সুবিধা প্রদান করে না বিধায় বলা যায় এটি গ্রাহকের জন্য অনেক বড় সুবিধা প্রাপ্তি ব্যাংক।
৯। পশুসম্পদ ঋণ সুবিধা
গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহকরা এই ঋণ সুবিধাটি তাদের গবাদি পশু ক্রয় করার ক্ষেত্রে এবং গবাদি পশু মোটা তাজা জাতকরণের জন্য গ্রহন করে থাকে। এক্ষেত্রে তারা এই ব্যাংক থেকে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারে।
তবে এখানে এই ঋণের জন্য বার্ষিক সুদের হার ২০% হারে প্রদান করতে হয়। তবে এই ঋণটি আপনার সক্ষমতার ওপর আপনি চাইলে প্রতি সপ্তাহিকভাবে এক বছরের জন্য ঋণ নিতে পারেন। গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি তথ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয় কি তা আমাদের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের পেনশন হিসাব
বাংলাদেশের প্রায় সকল চাকরির ক্ষেত্রে পেনশনের হিসাব একই রকম।গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধার মধ্যে এটি অন্যতম, যেখানে আপনি যদি চান আপনার পেনশনের হিসাবে টাকা আপনি নিজেই গণনা করে নিতে পারবেন। তবে তার জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম জানা উচিত জানা থাকতে হবে।
কারণ বাংলাদেশের সকল চাকরির পেনশন হিসেবে টাকা এই নিয়ম অনুসারে প্রদান করা হয়ে থাকে। তাই গ্রামীণ ব্যাংক এই নিয়মের বহিরভূত নয়। তাহলে চলুন এখন আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের পেনশন হিসেবে নিয়মটি সম্পর্কে জানি।
গ্রামীণ ব্যাংকের পেনশন হিসাব হলোঃ
{চাকরির মাসিক বেতন (গুণ) মাসিক সর্বশেষ বেতন}/২ = মোট পেনশনের টাকা।
গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা কয়টি?
গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা আসলে কতগুলো রয়েছে এই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া খুব একটা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের দেশের প্রায় এখন প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে এই ব্যাংকে শাখা রয়েছে। গ্রামীন ব্যাংক কোন উপকার জানানো ছাড়াই স্বল্প বৃত্তদের ও ঋণ প্রদান করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে এই গ্রামীণ ব্যাংক।
তবে সবচেয়ে ভাল হয় আপনি গ্রামীণ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করে সেখানে নির্দিষ্ট জেলা অনুসারে সেখানে কতগুলি গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা রয়েছে তালিকা জানতে পারবেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজারের বেতন কত
আমরা সকলেই প্রায় গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরির সার্কুলারের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। আর ম্যানেজার পদে সার্কুলার দিলে তো কোন কথাই নেই। তবে আমরা অনেকে এটা জানি না যে গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজার এর বেতন কত।
তবে গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজারের বেতন কত তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ সকল ব্যাংকের প্রায়ই তাদের ব্যাংক ম্যানেজারের বেতন সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলে না। তারা মূলত ব্যাংক ম্যানেজারের বেতন সম্পর্কে গোপন রাখে।
আসলে সরাসরি বেতন কাঠামো জানাটা বেশ কঠিন হয়ে ওঠে । তবুও আমরা আপনাকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। সাধারনত ব্যাংকের বেতন কাঠামো বছরের দুই বার অর্থাৎ ছয় মাস পর পর ইনক্রিমেন্ট যুক্ত করা হয়। এই ধারণা থেকে আমরা বলতে পারি গ্রামীন ব্যাংকের একজন ম্যানেজারের বেতন সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে অনেক সময় এর তারতম্য দেখা যায়।
গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান কে
আমরা যারা গ্রামীন ব্যাংকে পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নেই তখনা আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগে গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান কে? মূলত আময়াদের এই প্রশ্নের উত্তর জানানোর জন্যই পোষ্টের এই অংশে আলোচনা করছি।
বর্তমানে (এপ্রিল ২০২৫) গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান এর নাম হলো অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের অধ্যাপক ছিলেন।
তবে ড. একেএম সাইফুল মজিদ ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিল। তার নিয়োগ ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাতিল করা হয়। তিনি ছিলেন একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) এর একজন অধ্যাপক। আশা করছি বুঝতে পারছেন গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান কে?
গ্রামীণ ব্যাংক কি সরকারি
গ্রামীণ ব্যাংক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নাকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই সম্পর্কে আমরা অনেকে অবগত নয়।যদি প্রশ্ন করা হয় গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি ব্যাংক কিনা তাহলে এক কথায় উত্তর হবে না। গ্রামীণ ব্যাংক কোন সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নয়।
এই ব্যাংকটি মূলত একটি নিজস্ব মালিকানা প্রতিষ্ঠা স্বাধীন ব্যাংক। যা দেশের জাতীয় আইন দ্বারা অনুমোদিত রয়েছে। ঋণ গ্রহীতারা এই গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান মালিক হিসেবে নিয়োজিত। যারা এই ব্যাংকের ৯৭% শেয়ার করে। আর বাকি রইল ৩% । এই বাকি ৩% ক্রয় করে দেশের সরকার।
গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলী করে থাকে। তবে এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যাবলী কিভাবে জানব। আপনারা চিন্তা করবেন না, আমরা এখন গ্রামীণ ব্যাংকের জনপ্রিয় চারটি কার্যাবলী গুলি সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রতি বছর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান তৈরি করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক অনেকগুলি কর্মসূচি নিয়ে থাকে। যেমন স্বকর্মসংস্থান, কুটির শিল্প, প্রশিক্ষণ প্রদান, এছাড়াও আরও অনেক কাজের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক দেশের গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।
তাহলে বুঝতে পারতেন গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা কেমন এবং এটি দেশের কতটা কাজে লাগে।এছাড়াও গ্রামীণ ব্যাংকের আরো অনেকগুলো কর্মসূচি রয়েছে। যেমন বন্যায় ত্রাণ কর্মসূচি, ডিপোজিট পেনশন স্কিম, অগভীর নলকূপ স্থাপনা, ঋণ গ্রহণকারীদের জন্য পেনশন স্কিম ইত্যাদি। গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি কিনা তা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় তা আমাদের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।
সাধারন প্রশ্ন উত্তর (FAQs)
গ্রামীণ ব্যাংক কি ধরনের প্রতিষ্ঠান?
গ্রামীণ ব্যাংক হচ্ছে মূলত ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান কারী আর্থ সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান ব্যাক্তি কে?
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান ব্যাক্তি হলেন ডাঃ মোহাম্মদ ইউনুস।
গ্রামীণ ব্যাংকের এর মালিক কে?
অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের এর মালিক ।
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় কত সালে?
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সালের অক্টবর মাসে।
গ্রামীণ ব্যাংক কি ধরনের লোন দেয়?
গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরণের ঋণ প্রদান করে থাকে। যেমনঃ কৃষি লোন ব্যবসা লোন পশুসম্পদ ঋণ উদ্যোক্তা ঋণ শিক্ষা লোন হাউজিং লোন গৃহস্থালি লোন