সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও দোয়া – সালাতুত তাসবিহ নামাজের সময়

নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। কেননা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সকল নামাযের মধ্যে বলেছেনঃ অতএব, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী থেকে স্পষ্ট যে, সালাতুল তাসবীহ নামাযের ফজিলত অনেক বেশি হতে পারে। তাহলে চলুন সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও দোয়া এবং এই নামাজের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
সালাতুল তাসবিহ কি?
সালাতুল তসবিহ (صلاة تسبيح ) এটি একটি আরবি বাক্য যেটাকে বাংলায় তাসবিহের নামাজ বলা হয়। এখানে সালাত অর্থ হচ্ছে নামাজ এবং তাসবিহ মানে سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ এই তাসবিহ কে বুঝানো হয়েছে। যে নামাজের মধ্যে এই তাসবীহটা পড়া হয়ে থাকে, ওই নামাজকে সালাতুল তসবিহ বলা হয়।
সালাতুত তসবিহ নামাজটা মূলত একটি ঐচ্ছিক এবাদত, যেটা কিনা বাধ্যতামূলক নয় নিজের ইচ্ছাতেই পড়তে হয় তথা পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মত নয়। আমাদের রাসূল (সাঃ) এই নামাজ পড়ার কথা নিজের চাচাকে জীবনে একবার হলেও খুব গুরুত্ব সহকারে বলেছেন।
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ত
সালাতুত তাসবিহ নামাজের অন্যান্য নামাজের মত করেই নিয়ত করতে হয়। এই নামাজের জন্য নিয়তের আলাদা কোন নিয়ম নেই ।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ত (আরবি)
نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى ارْبَعَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ التَّسْبِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَر
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ত (বাংলা)
হে আল্লাহ আমি শুধুমাত্র আপনার সন্তুস্টির জন্যসালাতুত তাসবিহ চার রাকাত সুন্নত সালাতের নাম কেবলামুখী হয়ে আদায় করছি আল্লাহু আকবার। সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ত জেনে নেওয়ার পাশাপাশি আপনারা চাইলে শবে কদরের নামাজ কত রাকাত এই বিষয়ে আমাদের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম
প্রথমেই আমরা এই সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম নিয়ে কথা বলবো। সালাতুত তাসবিহ নামাজ এ ৩০০ বার সুবহানআল্লাহ (সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) জিকির পড়তে হয়। নামাজ এ ৩০০ বার এই তাসবিহ টি পড়া সম্ভব হলেও তা নামাজ অবস্থায় গুনবো কিভাবে, হিসাব রাখবো কীভাবে তা হয়তো অনেকে বুঝতে পারেন নি। নিচে এই নামাজ টি পড়ার নিয়ম দেওয়া হলো।
সুরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলানোর পাশাপাশি প্রত্যেক রাকাআতে সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার-এ তাসবিহটি ৭৫ বার পড়তে হবে। তবে একই নিয়মে ৪ রাকাআতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়ার মাধ্যমে তা আদায় করতে হয়।
- প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে এবং তার সূরা মিলিয়ে আরেকটি সূরা পরতে হবে।
- এরপরে আপনাকে প্রথম রাকাতে কেরাত শেষ করে সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” ১৫ বার পাঠ করবেন।
- এরপর রুকুতে যাবেন এবং রুকু অবস্থায় দোয়াটি ১০ বার পড়বেন সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
- এরপর রুকু থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
- তারপরে সিজদা অবস্থায় সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ১০ বার পড়বেন।
- তারপরে আবার সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার এইটা ১০ বার পড়বেন।
- এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদা অবস্থায় ১০ বার পড়বেন সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
- এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
- এটিই হচ্ছে মূলত ৭৫ বার প্রতি রাকাতে । আর চার রাকাতেই আপনাকে অনুরূপ করতে হবে।
- দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদ পড়ার আগে ওই তাসবিহ ১০ বার পড়বেন, তারপর তাশাহুদ পড়বেন।
- তারপর আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠবেন।
- এরপর বাকি ২ রাকাতে একই নিয়মে এই তাসবিহ পাঠ করবেন।
এভাবে দ্বিতীয় রাকাআতে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকাআতে মতো এ নামাজ আদায় করা। দুই রাকাআতের পর বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে উপরের নিয়মে বাকি ২ রাকাআত আদায় করে নেয়া।
[বিদ্রঃ এই নামাজ দিনের যে কোনো সময় পড়তে পারবেন। তবে যে সময় গুলোতে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ তখন পড়লে হবে না। আর কোনো কারণে এই নামাজ এ সাহু সিজদাহ এর প্রয়োজন হলে সেখানে সুবহানাল্লাহ তাসবিহ পড়তে হবে না]
মনে রাখতে হবে
কোন কারণবশত এই নামাজের সময় যদি সাহু সেজদার প্রয়োজন পড়ে তাইলে এ সেজদা বসাবস্থায় এ তাসবিহ পড়তে হবে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজান মাসে সর্বাধিক তাসবিহ সম্বলিত নামাজ পড়ে উল্লেখিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সালাতুল তাসবিহ নামাজের ফজিলত
সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। আবু দাউদ শরীফের হাদিস নং ১২৯৭, ইবনে মাজাহ শরিফের হাদিস ১৩৮৭ তে একটি হাদিসের মাধ্যমেই সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। হাদিসটি হল:
এটি এমন একটি আমল যখন আপনি তা করবেন তখন আল্লাহ তায়ালা আপনার যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। অতীত ও ভবিষ্যতের নতুন-পুরনো, ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত, জানা-অজানা, ছোট-বড় যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। আমলটি হলো সালাতুত তাসবিহ।
হে চাচা! যদি সম্ভব হয় এই নামাজ প্রতিদিন একবার পড়বেন। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে প্রতি শুক্রবার পড়বেন। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে প্রতি মাসে একবার, আর যদি তাও সম্ভব না হয় তবে প্রতিবছর একবার পড়বেন। আর এটাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে জীবনে একবার হলেও সালাতুত তাসবিহ আদায় করবেন।’
সালাতুল তাজবীহ নামাজের ফজিলত ছিল অপরিসীম। আমি গিয়েছিলাম কারণ হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচা হজরত আব্বাস (রা.) তালাকে এই দোয়ার কথা বলেছিলেন,
এতেই আমরা বুঝতে পারছি যে, এ নামাজের ফজিলত অনেক বেশি এবং মহান আল্লাহ তায়ালা এসব নামাজের মাধ্যমে জীবনের ছোট-বড়, ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেন। তাই প্রতিটা মুসলিম জাতির উচিত বছরে একবার হলেও এই সালাত আদায় করা। আমরা যদি তা না করতে পারি তাহলে সারা জীবনে একবার হলেও কেন এই প্রার্থনা করব?
>> মহান আল্লাহ আপনার সবধরনের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
>> ইচ্ছা বা অনিচ্ছয় যা পাপ করবেন সেই গোনাহ মাফ করে দেবেন।
>> সগিরা ও কবিরা গোনাহ মাফ করে দেবেন।
>> প্রকাশ্য এবং গোপনে করা গোনাহ মাফ করে দিবেন।
সালাতুল তাসবিহ নামাজের ফজিলত জেনে নেওয়ার পাশাপাশি আপনারা চাইলে ফজরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত এই বিষয়ে আমাদের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের দোয়া
সালাতুত তাসবিহ নামাজে মূলত একটি তাসবিহ মোট ৩০০ বার পড়তে হয় । এই তাসবিহটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সালাতুত তাসবিহ নামাজের দোয়া টি হল : সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। এই তাসবীহগুলো মহান আল্লাহতালার নিকট খুবই পছন্দনীয়। চলুন এবার আমরা সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার তাসবিহ টির অর্থ দেখে আসি:
- সুবহানাল্লাহ অর্থ আল্লাহ পবিত্র
- আলহামদুলিল্লাহ অর্থ সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য
- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই
- আল্লাহু আকবার অর্থ আল্লাহ মহান।
সালাতুত তাসবিহ নামাজের সময়
সালাতুত তাসবিহ নামাজ আদায় করার নির্ধারিত কোন সময় নেই বললেই চলে। নামাজের জন্য নিষিদ্ধ সময় গুলো ছাড়া এই নামাজ যেকোন সময় আদায় করা যায়।
পবিত্র রমজান মাসে পবিত্র অন্যান্য ইবাদতের সাথে এই নামাজের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে হয়ে থাকে। কারণ রমজান মাসে মহান আল্লাহতালা প্রতিটা ইবাদতের ৭০ থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত সওয়াব বৃদ্ধি করে দেন।
লেখকের শেষ মতামত
সালাতুত তাসবিহ নামাজটি অনেক ফজিলত পূর্ণ। সালাতুত তাসবিহ নামাজটিআদায় করার ক্ষেত্রে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। প্রত্যেক রাকাতে ৭৫ বার চার রাকাতে মোট ৩০০ বার তাসবীহ পড়তে হয়। সালাতুত তাসবিহ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে যে ফজিলত পাওয়া যায় তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো। পূর্বের জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ এবং সেইসাথে অনেক সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। রমজান মাসে এ নামাজ আদায়ের ফজিলত সবচেয়ে বেশি।
এই ছিল আজকের সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি।
এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করি সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও দোয়া জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে জানতে পারবে।