Info

সান্ডা কি? সান্ডা খাওয়া কি হালাল? সান্ডা খাওয়ার উপকারিতা

সান্ডা কি? সান্ডা খাওয়া কি হালাল – বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এক ধরনের সরীসৃপ প্রাণীকে “সান্ডা” নামে ডাকা হয়। আবার কেউ কেউ একে গুইসাপ বা গোসাপও বলে থাকেন। তবে এই দুই প্রাণীর মধ্যে আদৌ কোনো পার্থক্য আছে কিনা, সান্ডা খাওয়া হালাল না হারাম – এসব নিয়ে অনেকের মনে বিভ্রান্তি কাজ করে।

সান্ডা শুধু একটা মজার ফেসবুক মিমের বিষয় নয়, বরং এটি হাজার বছরের পুরনো আরব ঐতিহ্যের অংশ। পুষ্টিগুণে ভরপুর ও হালাল এই খাবার মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে আগ্রহী ভোজনরসিকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই সান্ডা নিয়ে কৌতুক করলেও, এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অনস্বীকার্য। চলুন জেনে নেওয়া যাক সান্ডা কী এবং সান্ডা খাওয়া কি হালাল নাকি হারাম? 

সান্ডা কি 

সান্ডা সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলে পাওয়া যায় এবং এটি বংশবিস্তার করে ডিমের মাধ্যমে। প্রাপ্তবয়স্ক সাণ্ডার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এটি সাধারণত গাছের লতাপাতা, ঘাস ও শস্য খায়।মরুভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকে।, যা সাণ্ডা নামক প্রাণীকে অন্যান্য সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী থেকে আলাদা করে তোলে।

সান্ডা হচ্ছে মূলত এক ধরনের টিকটিকি জাতীয় প্রাণী যা মরুভূমির বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত। ইংরেজিতে একে Spiny-tailed lizard বা Uromastyx বলা হয়ে থাকে। এই প্রাণীটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, পাকিস্তান, ও ভারতের বেশ অঞ্চলে দেখা যায়। এরা দেখতে অনেকটা মোটা হয় এবং এদের লেজ কাঁটার মতো শক্ত ও কাঁটায় ভরা থাকে।

সান্ডার বৈশিষ্ট্য

  • দৈর্ঘ্য: ২৫-৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে
  • খাদ্য: গাছপালা, লতা-পাতা (তৃণভোজী)
  • লেজ: মোটা ও শক্ত, আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করে
  • বেঁচে থাকা: গর্তে বাস করে, দিনের বেলা বাইরে আসে
  • ত্বক: খসখসে, বাদামি বা ধুসর রঙের

সান্ডা খাওয়া কি হালাল

সাণ্ডা খাওয়া নিয়ে হাদিসে বিভিন্ন আলোচনা পাওয়া যায়, যা থেকে বোঝা যায় এটি খাওয়া নিষিদ্ধ নয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে এটি খাননি। এর কারণ হিসেবে তার ব্যক্তিগত অপছন্দ এবং খেতে অভ্যস্ত না হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।

সান্ডা খাওয়া কি হালাল

সান্ডা খাওয়া নিয়ে ইসলামি শরিয়তে ভিন্নমত রয়েছে। নিচে হানাফি, শাফেয়ী, মালিকি ও হাম্বলি মাযহাব অনুযায়ী মতামত তুলে ধরা হলো:

✅ হালাল মতামত:

ইবনে উমর (রা. ও ইবনে আব্বাস (রা.)  থেকে বর্ণিত, সান্ডা খাওয়া বৈধ।

হাদীসে আছে, “রাসূলুল্লাহ (সা.) সান্ডা খাননি, তবে নিষেধও করেননি।” – (বুখারী, মুসলিম)

❌ হারাম বা অপছন্দনীয় মতামত:

হানাফি মাযহাবে সান্ডা খাওয়াকে মাকরুহে তাহরিমি বলা হয়েছে, অর্থাৎ খাওয়া উচিত নয়।

কারণ এটি দেখতে ভীতিকর এবং সাধারণত মানুষের মধ্যে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করে।

📜 হাদীসের রেফারেন্স:

“একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে সান্ডা পরিবেশন করা হয়। তিনি সেটি খাননি। সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি হারাম?’ তিনি বললেন, ‘না, তবে এটা আমার জাতির ভূখণ্ডে ছিল না, তাই আমি এটি পছন্দ করি না।’”– (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৯৪৫)

হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে একবার এক লোক সাণ্ডা হাদিয়া দেয়। তিনি তা খাননি কিন্তু এটিকে হারামও ঘোষণা করেননি।” ( তিরমিযি)

হযরত ইবনে ওমর (রা) বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সাণ্ডা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বললেন, ‘আমি এটি খাই না, তবে এটিকে হারামও বলি না

ইবনে আব্বাস (রা) উল্লেখ করেছেন “রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দস্তরখানায় (খাবার খাওয়ার স্থান) এ সাণ্ডা পরিবেশিত হয়েছিলো। তিনি ঘৃণার কারণে তা খাননি, কিন্তু অন্য সাহাবীরা তা খেয়েছিলেন।”

উল্লিখিত হাদিসগুলো থেকে বুঝা যায় যে,সান্ডা খাওয়া হালাল, তবে এটি অপছন্দনীয় মনে করায় রাসূল (সাঃ) নিজে তা এড়িয়ে গেছেন। সান্ডা খাওয়া কি হালাল নাকি হারাম জেনে নেওয়ার পাশাপাশি আপনারা চাইলে ডিপ্রেশন নিয়ে কোরআনের আয়াত আমাদের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।

ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী সান্ডা খাওয়া

ফিকহের বিভিন্ন মাজহাব সাণ্ডা খাওয়ার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে।

  • শাফেয়ী ও মালিকি মাজব: এই মাজহাব অনুযায়ী, সাণ্ডা খাওয়া হালাল। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) নিজে সাণ্ডা খাওয়া হারাম ঘোষণা করেননি।
  • হানাফি মাজহাব: হানাফি আলেমগণ এটিকে মাকরূহ বলেছেন। তবে মাকরূহ হওয়া বলেই তা হারাম নয়। এটি না খাওয়াই উত্তম বলে মনে করেন তারা।
  • হাম্বলি মাজহাব: এই মাজহাবেও সাণ্ডা খাওয়াকে বৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সান্ডা খাওয়া হালাল হওয়ার কারণ

১. রাসূলুল্লাহ ( সা)-এর অনুমতি : রাসূলুল্লাহ (সা) সাণ্ডাকে হারাম ঘোষণা করেননি এবং সাহাবিরা তার সামনে এটি খেয়েছেন।

২. বিভিন্ন আলেমদের মতামত : ইমাম মালিক থেকে শুরু করে  ইমাম শাফেয়ী এবং অন্যান্য ফকিহদের মতে সাণ্ডা খাওয়া হালাল।

৩. বিষাক্ত নয়: সাণ্ডা কোনো বিষাক্ত প্রাণী নয়। এটি নিরামিষভোজী এবং পরিবেশের ক্ষতি করে না।

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সান্ডার গুরুত্ব

অনেক হাদীসে উল্লেখ আছে যে, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সামনে সান্ডা পেশ করা হয়েছিল। তিনি নিজে খাননি, তবে সাহাবীদের নিষেধ করেননি। ফলে অনেক ফকীহ সান্ডাকে হালাল হিসেবে গণ্য করেছেন।

সান্ডা খাওয়ার উপকারিতা

বিশেষ করে এটি মরুভূমি অঞ্চলে সাধারণ খাদ্য হওয়ায় স্থানীয় লোকেদের কাছে এটি পুষ্টিকর একটি খাদ্য হিসেবে পরিচিত। তারা মনে করেন সাণ্ডা খেলে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

সান্ডা খাওয়ার উপকারিতা

সাণ্ডার মাংস খেতে অনেকটা শক্ত মাছের মাংসের মতো স্বাধ লাগে। সান্ডার হাড্ডী মাছের কাটার মত শক্ত এবং খেতেও প্রায় মাছের মাংসের মত মনে হয়।

১। প্রোটিনের উৎস

সাণ্ডার মাংস প্রোটিন সমৃদ্ধ যা শরীরের মাংসপেশি মজবুত করে।

২। কম চর্বিযুক্ত

সাণ্ডার মাংসে চর্বির পরিমাণ কম, যা স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের জন্য উপযোগী।

৩। মরুভূমি অঞ্চলের উপযোগী খাদ্য

এটি সহজলভ্য এবং স্থানীয় পরিবেশে সহজে রান্না করা যায়। তবে বর্তমান সময়ে সাণ্ডা আগের মতো দেখা যায় না বা সহজলভ্য নয়।

৪। শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক 

মাংসে থাকা পুষ্টি উপাদান ক্লান্তি দূর করবশক্তি যোগায়।

৫। শক্তিবর্ধক ও পুষ্টিকর

সান্ডার মাংসে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, আয়রন ও মিনারেল যা শারীরিক শক্তি বাড়াতে সহায়ক। যারা দৈহিক পরিশ্রম বেশি করেন তাদের জন্য এটি কার্যকর।

৬। যৌনস্বাস্থ্যে উপকারিতা

সান্ডার মাংস ও চর্বি এক প্রকার প্রাকৃতিক এফ্রোডিসিয়াক হিসেবে পরিচিত যা যৌনস্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। 

৭। হাড়ের গঠন মজবুত করে

সান্ডার মাংসে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা হাড়ের গঠন মজবুত রাখতে ভূমিকা রাখে। বয়স্ক ও হাড়ের সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে।

৮। রক্তস্বল্পতা দূর করে

এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যার ফলে এটি অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে। 

সান্ডা রান্নার পদ্ধতি ও স্বাদ

সৌদিতে সান্ডাকে সাধারণত কাবাব, ঝলসানো বা ঝোল করে রান্না করা হয়। অনেক সময় মরিচ, জিরা, গোলমরিচ, দারুচিনি দিয়ে মশলাদার করে ভুনা করা হয়। এর স্বাদ কিছুটা মুরগির মাংসের মতো হলেও ঘন ও গাঢ় হয়। সান্ডা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি আপনারা চাইলে চাপা ভাঙ্গা ঠিক করার উপায় আমাদের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন। 

সৌদিতে সান্ডার জনপ্রিয়তা কেন?

মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি অঞ্চলে সান্ডা বহু শতাব্দী ধরে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর কয়েকটি কারণ হলো:

প্রোট্রনসমৃদ্ধ খাদ্য: সান্ডার মাংস উচ্চমানের প্রোটিন সরবরাহ করে যা মরুভূমির শুষ্ক পরিবেশে কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।

ঔষধিগুণে ভরপুর: আরবদের বিশ্বাস অনুযায়ী সান্ডার মাংস যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর করে।

প্রাচীন বেদুইন সংস্কৃতির অংশ: সৌদি আরবে সান্ডা খাওয়ার ঐতিহ্য মূলত বেদুইনদের জীবনধারা থেকে এসেছে যারা শিকার করে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাঁচতেন।

সানডার তেলের উপকারিতা কি

সান্ডা তেল দীর্ঘদিন ধরে আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি মূলত পুরুষদের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে দাবি করা হয়।

সানডার তেলের উপকারিতা কি

বিশেষ করে পুরুষাঙ্গে মালিশ করলে এটি রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দুর্বলতা দূর করতে পারে এবং যৌন ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। 

এছাড়াও গাঁটের ব্যথা, পেশির ক্লান্তি এবং হাড়ের সমস্যাতেও সান্ডা তেল প্রয়োগ করা হয়। অনেকেই এটিকে প্রাকৃতিক যৌন উদ্দীপক হিসেবে ব্যবহার করেন।

তবে এই দাবিগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দুর্বল এবং বাজারে ভেজাল তেলের আধিক্য রয়েছে। তাই ব্যবহারের আগে পণ্যটি আসল কিনা যাচাই করা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করাই উত্তম।

সান্ডার তেল বা “সান্ডা তেল” এর ব্যবহার

বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানে “সান্ডা তেল” নামে একটি জনপ্রিয় আয়ুর্বেদিক তেল রয়েছে, যা পুরুষদের যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়।

এটি কীভাবে তৈরি হয়?

সান্ডা নামক প্রাণীটি মেরে তার তেল বের করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

⚠️ সতর্কতা:

  • এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়
  • ভুয়া তেলের ব্যবসা অনেক বেশি
  • শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে

ইসলামি দৃষ্টিকোণ:

  • প্রাণী হত্যার মাধ্যমে তৈরি হওয়ায় ফিকাহ অনুযায়ী বিতর্ক রয়েছে

সান্ডা নিয়ে সাধারণ ভুল ধারণা

  • সান্ডা মানেই গুইসাপ – ভুল। এগুলো আলাদা প্রজাতির প্রাণী
  • সান্ডা খেলে পুরুষত্ব শক্তি বাড়ে – বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন প্রচারণা
  • সব আলেম সান্ডাকে হারাম বলেন – না, অনেক আলেম একে হালাল বলেন

লেখকের শেষ কথা

যেহেতু এটি হালাল, তাই যদি কেউ এটি খেতে চায়। তবে ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী তা প্রস্তুত করতে হবে। সাণ্ডা জবাই করতে হলে সাধারণ নিয়মে আল্লাহর নাম নিয়ে তা জবাই করতে হবে।তএটি ইসলামের খাদ্যবিধি এবং নবীজির সুন্নাহর প্রতি সম্মান দেখিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে না খাওয়ারও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটি খাওয়া কিংবা এড়িয়ে যাওয়া উভয়টাই ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য।

সান্ডা একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির টিকটিকি জাতীয় প্রাণী, যা মূলত মরুভূমি অঞ্চলে দেখা যায়। এটি খাওয়া ইসলামি শরিয়তে হারাম নয়, বরং হালাল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে গুইসাপ সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রাণী এবং অধিকাংশ আলেম একে হারাম বলেছেন।

সান্ডা ও গুইসাপের মধ্যে পার্থক্য জানা খুব জরুরি, বিশেষ করে ধর্মীয় বিধান অনুসরণের জন্য। ভুয়া প্রচারণা ও ব্যবসার ফাঁদে পা না দিয়ে, ইসলামি জ্ঞান, বৈজ্ঞানিক তথ্য ও সচেতনতার মাধ্যমে এই বিষয়গুলো বুঝে নেওয়া উচিত।

Atif Abdullah

Atif Abdullah is a passionate writer and expert in technology, Information and News. With years of experience in Information, he enjoys sharing insightful and well-researched content that helps readers stay informed. Atif has a keen interest in digital trends and his writing reflects his deep understanding and analytical approach.
Back to top button