তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের | তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়া

খুব শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এই মাহে রমজানকে ঘিরে প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির মধ্যে আনন্দ উল্লাস ও বছরের পবিত্র একটি মাস উদযাপন করতে পেয়ে সকলেই আনন্দিত হয়।তাই এ পবিত্র মাহে রমজান আমাদের সিয়াম পারনের মাস।এই দিনগুলো প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি রোজা রেখে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও বিভিন্ন আমল করেন।
প্রতিটা মুসলমানদের পবিত্র মাস রমজান চলে এসেছে। এই মাসকে কেন্দ্র করে আমরা সকলেই বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগী করে থাকি তার মধ্যে অন্যতম ইবাদ্দত হচ্ছে চালু তারাবির নামাজ। তারাবির নামাজের নিয়ম মূলত পুরুষদের থেকে মহিলাদের একটু ভিন্ন (তবে এটা শুধু তারাবির ক্ষেত্রেই নয়) পুরুষ এবং মহিলার নামাজের মধ্যে এমনিতেই পার্থক্য রয়েছে।
তারাবির নামাজের সময়
তারাবি নামাজটি ঈশা নামাজের পর পড়তে হয়। অর্থাৎ, ঈশার নামাজ আদায়ের পর কিছু সময় বিরতি দিয়ে তারাবি নামাজ শুরু করা হয়। জামাতে পড়লে এটি আরো বেশি বরকতপূর্ণ হয়।
তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের
তারাবির নামাজ হলো রমজান মাসে বিশেষ একটি সুন্নত নামাজ, যা রাতে ইমামসহ মুসল্লিরা মসজিদে আদায় করে থাকেন। এই নামাজটি সাধারণত ইফতার ও সাহরির মাঝের সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এটি আদায় করা রমজান মাসে মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ।
📌আরো পড়ুন 👇
মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজের নিয়ম-কানুন কিছুটা আলাদা হতে পারে, তবে মূলত তা পুরুষদের মতোই আদায় করা হয়। এখানে আমরা তারাবির নামাজের কিছু নিয়ম এবং মহিলাদের জন্য বিশেষ দিকগুলো আলোচনা করবঃ
তারাবির নামাজের পরিমাণঃ তারাবির নামাজের জন্য মোট ২০ রাকআত ফরজ নয়, এটি সুন্নত। তবে অনেক মসজিদে ৮ রাকআত তারাবি পড়ানো হয়, যা ইমামের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে ২০ রাকআত আদায় করাটাও সাধারণভাবে প্রথা এবং অধিক ফজিলতপূর্ণ।
মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজের নিয়মঃ মহিলারা মসজিদে তারাবির নামাজে অংশ নিতে পারেন, তবে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়ঃ
অন্তর্বাস এবং পোশাকঃ মহিলাদের নামাজের সময় সঠিক পর্দা নিশ্চিত করতে হবে। তারা যেন শরীরের কোনো অংশও খোলামেলা না রাখেন, সেজন্য মোতাবেক পোশাক পরিধান করতে হবে।
অথবা বাড়িতে নামাজঃ মহিলারা মসজিদে যেতে চাইলে, বাড়িতে তারাবির নামাজও আদায় করতে পারেন। মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য পর্দার বিধি এবং আলাদা মেহরাব বা স্থান প্রয়োজন হয়, যেটি মসজিদে বা অন্য জায়গায় সুব্যবস্থা থাকতে পারে।
নামাজের পূর্ব প্রস্তুতিঃ তারাবির নামাজ শুরু করার আগে কিছু প্রস্তুতি নেয়া জরুরি–
নিয়মিত বিশুদ্ধতাঃ নামাজ আদায়ের আগে যথাযথ ওযু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহিলারা বিশেষভাবে মাসিক বা নফসির অবস্থায় থাকলে তারাবির নামাজ পড়তে পারবেন না।
নিয়মিত সাহরি ও ইফতারঃ রোজা রাখার জন্য, তাছাড়া নামাজে শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সাহরি ও ইফতার করা জরুরি।
মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ত
নামাজের আদায়ঃ প্রথমেই নিয়ত তারাবীহ নামাযের নিয়ত অন্যান্য নামাযের ন্যায়। অন্তরে শুধু সুন্নতে মোয়াক্কাদা তারাবীর নামাযের নিয়ত করে তাকবীর বলবে।
এরপরে তাকবীরে তাহরিমা বলে বাঁম হাতের ওপর ডান হাত রাখতে হবে তারপরে অনুচ্চৈঃস্বরে সানা বলুন।
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। (নাসায়ি, হাদিস: ৮৮৯)।
এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম। এরপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ুন। (তাহাবি: ১/৩৪৭) । এবার সুরায়ে ফাতিহা পড়ুন। শেষ হলে অনুচ্চৈঃস্বরে আমিন বলুন।
আমিন বলার পর আবার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ুন। সুরা ফাতিহা শেষ হলে একটি সুরা অথবা তিনটি ছোট আয়াত, যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয় পড়ুন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৬৯৫)।
তারপরে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস: ৭২৯)।
রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)।
রুকুতে কমপক্ষে তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস: ২৪২)।
এবার রুকু থেকে উঠে সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে মাথা ওঠান। আবার অনুচ্চৈঃস্বরে শুধু রাব্বানা লাকাল হামদ বলুন।
এরপর তাকবীর তথা আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যান। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৪৭)।
সিজদায় কমপক্ষে তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস: ২৪২) ।
এরপর সিজদা থেকে ওঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাতকে রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়ুন। এরপর তাকবীর বলে দ্বিতীয় সিজদা করুন। দ্বিতীয় সিজদায়ও কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পড়ুন। অতঃপর সরাসরি তাকবীর বলে দাঁড়িয়ে যান। এ পর্যন্ত প্রথম রাকাত সম্পন্ন হলো।
এখন দ্বিতীয় রাকাত শুরু হলো। এতে হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজু বিল্লাহও পড়বেন না। তবে আগের মতো সুরা ফাতিহা ও সঙ্গে অন্য একটি সুরা পড়ে রুকু-সিজদা করবেন।
দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়বেন। এরপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে মাথা ফেরাবেন।
এভাবে আবার দুই রাকাত সম্পন্ন করুন। এভাবে চার রাকাত সম্পন্ন করার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার নামায শুরু করুন।
মূলত এভাবে তারাবির নামাজ সঠিকভাবে আদায় করার জন্য মহিলাদের কিছু মৌলিক নিয়ম মনে রাখা উচিত, যেমন পর্দা বজায় রাখা, শৃঙ্খলা মেনে নামাজ পড়া, এবং অন্যান্য মুসল্লিদের সাথে সম্মানের সাথে আচরণ করা। তারাবির নামাজের মাধ্যমে রমজান মাসে আল্লাহর কাছ থেকে রহমত এবং ক্ষমা লাভ করা সম্ভব।
তারাবির নামাজ কত রাকাত
আপনি তারাবির নামাজ ২০ রাকাতও পড়তে পারেন। এটি ওলামায়েকেরামের বক্তব্য রয়েছে এবং এ বিষয়ে সাপোর্ট রয়েছে এবং এর পক্ষে দলিলও রয়েছে। ৮ রাকাতও আপনি পড়তে পারেন। ৮ রাকাতের বিষয়ে ওলামায়েকেরামের ইস্তিহাদ রয়েছে তারাবির সালাতের বিষয়ে।
আপনি যে কথা বলেছেন, রাসুলুল্লা (স.) কখনো তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়েননি, এ কথা সত্য বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কোনো সহিহ হাদিসের মাধ্যমে এটি সাব্যস্ত হয়নি রাসুলুল্লাহ (স.) ২০ রাকাত পড়েছেন।
তারাবির নামাজ মূলত দুই রাকআত করে পড়া হয়। তারাবির সালাতের রাকআত সংখ্য নির্দিষ্ট নয়। যারা হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসরণ করেন তারা মূলত ২০ রাকআত সালাত আদায় করেন এবং যারা, মালিকি ফিকহের অনুসারীগণ ৩৬ রাকআত আর যারা আহলে হাদীস অনুসারী তারা ৮ রাকআত তারাবি পড়েন।
তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়া
তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়া আমাদের জেনে নেওয়াটা জরুরি। তাহলে আসুন পোষ্টের এই অংশে আমরা তারাবির নামাজের আরবি ও বাংলা নিয়ত এবং তারাবির নামাজের দোয়া তুলে ধরেছি।
তারাবি নামাজের নিয়ত আরবিতে
এখন আমরা তারাবি নামাজের নিয়ত আরবিতে জেনে নিব।
আরবিঃ “نويت أن أصلي سنة التراويح لله تعالى”
বাংলা উচ্চারণঃ “নাওয়াইতু আন আসলি সুননাতাত-তারাওইহি লিল্লাহি তাআলা”
অর্থঃ “আমি আল্লাহর জন্য তারাবি নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম।”
এটি সঠিকভাবে মন থেকে করতে হবে নামাজ শুরু করার আগে।
তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলায়
নিয়ত আরবিতে করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আরবি কিংবা বাংলায় নিয়ত করলে তা হয়ে যাবে।
তারাবিহ’র দুই রাকাআত নামাজ ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য (এ ইমামের পেছনে) পড়ছি- (اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার।
২ রাকাআত করে আলাদা নিয়তে ৪ রাকাআত নামাজ পড়া। ৪ রাকাআত পড়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া। সেসময় তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার পড়া। গোনাহ মাফে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।
কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আবার ২/২ রাকাআত করে ৪ রাকাআত নামাজ আদায় করা। আবার কিছু বিশ্রাম করে আবার নামাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।
প্রত্যেক ৪ রাকাআত নামাজ পড়ার পর বিশ্রামের সময় অনেকেই আল্লাহর কাছে দোয়া করে থাকেন। অনেকে মুনাজাতও করে থাকেন। প্রতি ৪ রাকাতে মুনাজাত না করে একেবারে শেষে করলেও কোনো সমস্যা নেই।
তারাবিহ নামাজের দোয়া
তারাবিহ নামাজ আদায় করার পর আসলে মোনাজাত করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই বললেই চলে। তবে গোনাহমুক্ত জীবন লাভে তাওবা-ইসতেগফারের কোন বিকল্প নেই।
তবে আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে, যা তারাবিহ নামাজে পড়া হয়। আর এ দোয়াটি ব্যাপকভাবে পড়ার কারণে অনেক মানুষই তা মুখস্ত জানে। চাইলে এ দোয়াটিও প্রতি ৪ রাকাআত পর পর পড়া যেতে পারে। আর তাহলো-
سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ
উচ্চারণ: ‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’
তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাআত পর পর শুধু এ দোয়াটিই পড়তে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনো দোয়া-ই পড়া যেতে পারে। এতে তারাবিহ নামাজেরও কোনো অসুবিধা হবে না।
আবার তারাবিহ নামাজ শেষ হলেও সবাই সমবেতভাবে মুনাজাত করে। আবার অনেকে একাকি মুনাজাত করে। এ মুনাজাত সমবেত হোক আর একাকি হোক যে কোনো দোয়া দিয়ে তা করা যেতে পারে।মনের একান্ত কথাগুলো যেভাবে ইচ্ছা আল্লাহর কাছে তুলে ধরায় কোনো অসুবিধা নেই।
তবে তারাবিহ নামাজের দোয়ার মতো মুনাজাতেরও একটি ব্যাপক প্রচলিত দোয়া রয়েছে। ইচ্ছা করলে এ দোয়াটিও পড়া যায়। আর তাহলো-
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
তারাবির নামাজের ইতিহাস
এখন তারাবির নামাজের ইতিহাস সম্পর্কে জানি। তারাবির নামাজের ইতিহাস ইসলামের প্রাথমিক যুগের সঙ্গে যুক্ত। এটি রমজান মাসের বিশেষ একটি নামাজ, যা রাতে আদায় করা হয়।
“তারাবি” শব্দটি আরবি “تراويح” থেকে এসেছে, যার অর্থ “বিশ্রাম নেওয়া” বা “বিশ্রাম করে নামাজ পড়া”। এই নামাজে সাধারণত দীর্ঘ রাকআত হয়, এবং একেকটি রাকআতের মধ্যে ছোট-বড় সূরা পড়া হয়। এটি মূলত রমজান মাসের রাতগুলোতে আল্লাহর কাছে দোয়া, তিলাওয়াত এবং ইবাদত করার জন্য বিশেষভাবে আদায় করা হয়।
তারাবির নামাজের ইতিহাস নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
শুরুঃ তারাবির নামাজের শুরু হয়েছিল প্রাথমিক ইসলামিক যুগে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রথম রমজান মাসে মসজিদে কিছু দিন তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করেছিলেন। প্রথম দিকে তিনি সবাইকে জামাতে তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে, কয়েকদিন পর তিনি তা বন্ধ করে দেন। কারণ, তিনি চিন্তা করেছিলেন যে, যদি এর পরিণতি ফরজ নামাজের মতো হয়ে যায়, তবে মুসলিমরা তা পালন করতে বাধ্য হবে। তবে, তিনি কখনোই তারাবির নামাজের গুরুত্ব অস্বীকার করেননি এবং বলেছেন যে এটি একটি ঐচ্ছিক সুন্নত নামাজ।
ঐতিহ্যঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর, তারাবির নামাজ মুসলিম সমাজে একটি প্রথা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হযরত ওমর (রা.) তার খিলাফতকালে এটি পুনরায় জামাতে পড়ানোর ব্যবস্থা করেন, এবং তখন থেকে এটি মুসলিম সমাজে প্রচলিত ইবাদত হয়ে ওঠে। হযরত ওমর (রা.) এর সময় মসজিদে ইমাম দ্বারা তারাবির নামাজ জামাতে পড়ানো শুরু হয় এবং এটি ২০ রাকআত পর্যন্ত পড়া হত।
বর্তমানকালেঃ বর্তমানে, অনেক মুসলিম দেশে তারাবির নামাজে ৮ বা ২০ রাকআত পড়া হয়। এটি মসজিদে জামাতে অথবা বাড়িতে একা পড়া যেতে পারে। তারাবির নামাজের ফজিলত ও বরকত প্রতিটি মুসলমানের জীবনে বিশেষ একটি মুহূর্ত এনে দেয়, কারণ এটি রমজান মাসের মধ্যে এক বিশেষ ইবাদত, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ প্রদান করে।
তারাবির নামাজ ইসলামিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি অংশ, যা রমজান মাসের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে আরও গভীর করে। এটি মুমিনদের একত্রিত হওয়ার, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার এবং কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে রুহানী উৎকর্ষ লাভ করার একটি মাধ্যম।
তারাবির নামাজ সম্পর্কে শেষ মতামত
তারাবির নামাজ পুরুষদের জন্য যেমন সুন্নত তেমনি মহিলাদের জন্য সুন্নত। কেননা শরীয়তের সমস্ত ব্যাপারে মহিলাদেরকে পুরুষদের অধীনে করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে পুরুষদের উপর যেমন তারাবির নামাজ সুন্নত মুয়াক্কাদা ঠিক তেমনি মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
কেউ যদি এমনটা মনে করেন যে, মহিলাদের ক্ষেত্রে তারাবির নামাজ পড়ার দরকার নেই কিংবা প্রয়োজনীয়তা নেই তাহলে এটা ভুল ধারণা। জামাতের সাথে মা-বোনরা চাইলে তারাবির নামাজ পড়তে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে একজন পুরুষ ইমামতি করবে এবং মহিলারা অবশ্যই পর্দা সহকারে থাকবে।
আশা করি আপনি আমাদের পোস্টটি পড়ে মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে পোষ্টটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে পারবে।