ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম ১০০ বার পড়লে কি হয়
আসসালামু আলাইকুম,,,
আলহামদুলিল্লাহ সকল প্রশংসা আল্লাহর। আজকে আমরা আলোচনা করবো গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া সম্পর্কে। দোয়া ইসলামের একটি অন্যতম ইবাদত। অনেক ধরনের দোয়া আছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। ইসলাম হচ্ছে দ্বীন, একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। আর ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে ঘুমিতে যাওয়া পর্যন্ত অনেক দোয়া রয়েছে। ধাপে ধাপে কাজে কাজে নানান ধরনের দোয়া আছে। আর এসব দোয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। আমাদের সবার উচিত দোয়াসমূহ মুখস্থ রাখা এতে সওয়াব পাওয়া যাবে এবং এরে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও পাওয়া যাবে। তাই দোয়ার কোন বিকল্প নেই।
দোয়া করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাই। আল্লাহ তায়ালার সাথে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় হয়। দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার স্বরণ করি আর আল্লাহ তায়ালার স্বরণ আমাদেরকে প্রকৃত মুমিন বানায়। একইসাথে আল্লাহ তায়ালার স্বরণ অবশ্যই আমাদের অন্তরে প্রশান্তি দেয়।
তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিত দোয়া শিখা দোয়া করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করা। একইসাথে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও সওয়াব করা যায় দোয়ার মাধ্যমে। আর দোয়া ঈমানকে তাজা রাখে তাই সবার দোয়া করা দোয়া মুখস্থ করা ও দোয়া চর্চা করা খুবই জরুরি।
ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম বাংলা অর্থ
অনেক দোয়ার মধ্যে একটি অন্যতম দোয়া হলো ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম একটি দোয়া। এই দোয়ার রয়েছে অনেক ফজিলত। আর এটি প্রতিদিন পাঠ করাও খুব ফজিলতের বিষয়।
ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম
ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ আসমাউল হুসনা তথা আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নামগুলির মধ্যে একটি নাম। এটি আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম হওয়ায় এটি মুখস্থ করে রাখাও। জরুরি। শুধু এটা না আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক ৯৯ নাম মুখস্থ করে রাখা উচিত। আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক ৯৯ মুখস্থ করার অনেক ফজিলত রয়েছে। তাই আমরা চাইলেই ৯৯ নাম মুখস্থ করে ফজিলতের মর্যাদা পেতে পারি। আর রহমান, রহিম এর মতনই ‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ আল্লাহর গুণবাচক নামের একটি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,
“আল্লাহ তায়ালা যে ৯৯ টি গুণবাচক নাম তথা আসমাউল হুসনা রয়েছে যে ব্যক্তি তার যিকির(আমাল) করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
এবার আসি আল্লাহর গুণবাচক নাম ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর অর্থ নিয়ে। এই নামের অর্থ “সকল সৃষ্টি জাহানের অধিপতি, যিনি সৃষ্টিকুল থেকে ভয় পাবার হক্বদার ও যিনি একমাত্র প্রশংসার যোগ্য/মালিক। যিনি মহত্ত্ব ও বড়ত্ব দয়া ও ইহসানের অধিকারী”
ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম ১০০ বার পড়লে কি হয়
আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম তথা আসমাউল হুসনার মধ্যে একটি হলো ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম। ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম দোয়াটি যারা ১০০ বার পড়বে তারা খুব ফজিলতপূর্ণ ও সওয়াবে পূর্ণ আমাল করবে এবং এটি উত্তম আমল। এই দোয়া পাঠের ফজিলত হিসেবে বলা হয় যে ব্যক্তি এই দপয়া নিয়মিত বা ১০০ বার পাঠ করবে, সে ব্যাক্তির উপর আল্লাহ তায়ালা পক্ষ হতে ধনদৌলত আসবে।
যে ব্যক্তি ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কর্মকাণ্ড কে সুন্দর ও উত্তমরূপে, সুষ্ঠু রূপে সম্পন্ন করে দিবেন।
আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম অর্থাৎ আসমাউল হুসনার সাথে যে সংশ্লিষ্ট দোয়া রয়েছে যেটি হলো ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম এটি নিয়মিত যে পড়বে তাকে আল্লাহ তায়ালা উত্তম ফলাফল দান করবে অর্থাৎ সব কাজ-কর্মের ভালো ফলাফল দান করবেন।
ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম হাদিস
ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম খুবই তাৎপর্যপূর্ণ দোয়া। এই দোয়ার রয়েছে অনেক ফজিলত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসে কুদসিতেও অনেক জায়গায় এই দোয়া পাঠে বর্ণনা পাওয়া যায়। এর সাথে অন্য দোয়া ও কিছু দোয়ার ভিতরেও ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম পাওয়া যায়। আসুন সে সমস্ত বর্ণনা গুলি জেনে নেই। এটি কত ফজিলতপূর্ণ তাও জানা সহজ হবে আমাদের জন্য।
এই ফজিলতপূর্ণ দোয়ার ফজিলতসমূহ,,,
জাল জালালি ওয়াল ইকরাম যেহেতু আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম সেহেতু ইয়া শব্দ সংযুক্ত করে ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম বলতে হবে। এটি আল্লাহকে ডাকার সময় বলতে হবে, ইয়া শব্দের মাধ্যমে।
আসুন কয়েকটি হাদিস দেখে নেই,,,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সব সময় এই দোয়াকে অপরিহার্য করে নেও। দোয়াটি হলো ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম। (সুনানে তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ ৩৫৩৫)
এ হাদিস থেকে বুঝা যায় ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম কতটা মর্যাদাপূর্ণ একটি হাদিস এবং এটি যে সব সময় পড়তে হয় এটিও বুঝা যায় এই হাদিস থেকে। তাই আমাদের সবার উচিত সব সময় এই দোয়াটি পাঠ করা। কারণ ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম দোয়াটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ দোয়াগুলির মধ্যে অন্যতম একটি দোয়া।
আরেকটি হাদিসে একটি দোয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। যার একটি অংশে ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামের কথা আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাদিসে পাকে বলেছেন,,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজ পড়তেন এবং নামাজ আদায়ের পর বসা অবস্থায় তিনি দোয়া পাঠ করতে। দোয়াটি হলো, “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।”
এই দোয়াটি পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। এই দোয়াতেও ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম বলা আছে। এই পুরো দোয়াটির অর্থ হলো,, হেল আল্লাহ পনি সালাম “শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদানকারী” আপনার পক্ষ থেকেই সালাম “শান্গি ও নিরাপত্তা” আসে। আপনিই বরকতময়, হে মহিমাময় মহানুভব। (সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বরঃ ৫৯১/৫৯২)
আরেকটি বর্ণনা বলি একবার,,
হযরত আনাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে বসা অবস্থায় ছিলেন। তারা দুজন যখন একসাথে বসে ছিলেন সেই সময় একজন ব্যক্তি হাজির হলো। একজন ব্যক্তি এসে নামাজ পড়ে এই দোয়া করলো, “আল্লাহুম্না ইন্নি আসআকুকা বিআ’ন্না লাকাল হামদু- লা ইলাহা ইল্লা আ”নতাল মান্নান, বাদিঊস সামা ওয়া তি ওয়াল আরদ ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম।”
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন “তুমি (সেই ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্যে করে) আল্লাহ তায়ালার দরবারে ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া পাঠ করেছ, যে নামে ডাক দিলে মহান আল্লাহ তায়ালা সাড়া দেন এবং কিছু চাইলে তা দান করেন। (সুনানে তিরমিজী, হাদিস নাম্বারঃ ৩৫৪৪ আবু দাউদ ১৪৯৫ নাসাঈ ১৩০)
এ হাদিস থেকেও এই দোয়াটি যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ দোয়া তা বুঝা যায়। তাই আমাদের সবার উচিত উপযুক্ত দোয়াসমূহ পাঠ করা। দোয়াগুলি পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং আল্লাহ তায়ালা থেকে সাড়া এ দোয়া কবুল হওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। আর এই দোয়াগুলি নামাজের পর। বা সারাদিনে যখন পারা যায় জিকির করা। জিকিরের মর্যাদার শেষ নেই। জিকির করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সাথে বান্দার সম্পর্ক নিবিড় হয় মজবুত হয়। আর আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর সন্তুষ্ট হন। এবং জিকিরের মাধ্যমে আমাদের অন্তরও প্রশান্তি লাভ করে।
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,,,
হে মুমিনগণ, তোমারা আল্লাহ তায়ালাকে পরিমাণে স্বরণ করো এবং সকাল সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা ঘোষণা করো। (সূরা আহযাব, আয়াত নাম্বার ৪১ থেকে ৪২)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল মুসলিমদের তার স্বরণ করার তৌফিক দান করুক। আমিন